মোঃ নিয়াজুল হক কাজল | রবিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | পড়া হয়েছে 7162 বার
তিনি ১৮৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তাঁর সঙ্গীতগুরু ছিলেন আগরতলা রাজদরবারের সভাসঙ্গীতজ্ঞ তানসেনের কন্যাবংশীয় নবাবী ওস্তাদ কাশিম আলী খাঁ। আলাউদ্দিনের ডাক নাম ছিল ‘আলম’।
দশ বৎসর বয়সে তিনি গভীর রাতে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য শিবপুরের গ্রামের বাড়ী থেকে পালিয়ে প্রায় ১৫ কিঃমিঃ পায়ে হেটে নবীনগর উপজেলার মানিক নগর থেকে নদী পথে ষ্টিমারে নারায়নগঞ্জ গিয়ে রেলে কলকাতা পৌছান। কলকাতায় বেশ কয়েক মাস অনাহারে-অর্ধাহারে-লাইটপোষ্টের নীচে-ঘরের বরান্দায় শোয়ে নিদারুণ কষ্টে কাটিয়ে ওস্তাদ নুলো গোপালের সক্ষাত পান। তাঁর নিকট সাত বছর তালিম নেন । এসময় ওস্তাদ গঙ্গারাম ঠাকুরের নিকটও পাল্টা অলংকারকার জাতীয় সঙ্গীতে তালিম নেন। ওস্তাদ নুলো গোপালের মৃত্যুর পর তিনি ওস্তাদ হাবু দত্তের নিকট বেহালা, ক্ল্যারিওনেট সহ অনেক বাদ্যযন্ত্রের তালিম নেন। এবং তাঁর নিকট থেকে বাদ্যবৃন্দের সংযোজন ও ষঞ্চালনের বিষয়ে জ্ঞাণার্জন করেন। ইডেন গার্ডেনের ব্যান্ড মাষ্টার লোবো সাহেবের নিকট পাশ্চাত্য সংগীতের শিক্ষা নেন এবং লোবো সাহেবের স্ত্রীর কাছে পিয়ানো বাজানো শিখেন। ওস্তাদ হাজারীর নিকট সানাই ও নাকাড়া বাজানো শিখেন। এরপর ওস্তাদ আহমদ আলী খাঁর নিকট তিন বছর শিষ্য হিসাবে থেকে তালিম নেয়ার পর রামপুরের নবাব হামিদ আলী খাঁর অনুকম্পায় তান সেনের বংশধর ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ওনার সংস্পর্শে থাকাকালীন সময়ে ব্যান্ড মাষ্টার দুলী খাঁ, মহম্মদ হোসেন খাঁ, করিম খাঁ প্রমুখ বিখ্যাত সংগীতজ্ঞদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন। ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর নিকট ২০ বছরের নির্ঘোম(সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর পাঁচটা) সহ মোট ৩৩ বছর তালিম নেন। শিক্ষা জীবণ শেষ করে তিনি ১৯১৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের মাইহার রাজ্যের রাজা বজেন্দ্র সিংহ রায়ের গুরু হিসাবে নিয়োগ পেয়ে সেখানে চলে যান।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ দু’শ রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। তিনি ১৯৩৫ সালে বিখ্যাত নৃত্য শিল্পী উদয় শংকরের সাথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে গিয়েছেন। তিনি দেশী-ভবদেশী বাদ্যযন্ত্ররে সমন্বয়ে আর্কেষ্ট্রার স্টাইলে একটি যন্ত্রীদল গঠন করে নাম দেন রামপুর স্ট্রিং ব্যান্ড’। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করে।
তাঁর সৃষ্টি করা রাগরাগিণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- হেমন্ত, হেমন্ত-ভৈরব, হেম বেহাগ, মদন-মঞ্জুরী, মাঝ-খাম্বাজ, শুভাবতী, দুর্গেশ্বরী, প্রভাকরী, ধবলশ্রী, মাধবগিরি, ভগবতী, মলুয়া-কল্যাণ, ভুবনেশ্বরী,গান্ধী,গান্ধী-বি
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা’কে নিয়ে লিখা বইঃ
গ্রামোফোনঃ
গ্রন্থনাঃ মোঃ নিয়াজুল হক কাজল, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক। লেখক ও গবেষক।
তথ্য সূত্রঃ
১/ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নিজ লেখা আত্ম জীবণী । ২/ওস্তাদ আলী আকবর খাঁন লিখিত পিতৃকথা। ৩/সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জীবন ও সাধনা- এডঃ আহাম্মদ আলী। ৪/ ওস্তাদ আলউদ্দিন খাঁ-মোবারক হোসেন খান ৫/উইকপিডিয়িা, ৬/বাংলাপডিয়িা।