মোঃ নিয়াজুল হক কাজল | শনিবার, ২০ আগস্ট ২০১৬ | পড়া হয়েছে 609 বার
মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের সেই ভয়ঙ্কর-বিভীষিকাময় রক্তাক্ত একুশে আগস্ট । বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের কলন্কিত দিন। সভ্যজগতের অকল্পনীয় এক নারকীয়-জঘন্য-ঘৃণিত হত্যাকান্ড চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে।
জাতির জণক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে কলন্কিত করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।স্বাধীন দেশে ঘাপটি মেরে থাকা হায়েনাদের দল, ৭১ সালের পরাজিত শক্তি ২০০৪ সালে বাঙ্গালী জাতির জন্য্ আরেকটি কলন্কিত অধ্যায়ের সূচনা করে। এঘটনার ঘৃণা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।ধিক্কার জানাই রক্তখেকু নর-পিচাশদের।
সন্ত্রাসবিরোধী আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশকে ঘিরে কোলাহলপূর্ণ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল বীভৎস মৃত্যুপুরীতে। এই ভয়াল ও নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তা সময়ের ব্যবধানে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ পেয়েছে। এই লোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও আলামত নষ্টসহ হেন কোন কাজ নেই যা করে যায়নি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। হাওয়া ভবনে বসে তখন জজ মিয়ার নাটক সাজানোর ঘটনা দেশবাসীর মুখে মুখে। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতোপূর্বে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ঢাকা সিটি ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেফতার করে। ২০১১ সালের ৩ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। একই বছরের ৩ জুলাই গ্রেনেড হামলার হত্যা ও বিস্ফোরকের পৃথক দুই মামলায় সিআইডির সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। নতুন সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ নতুন ৩০ জনকে আসামি করা হয়। সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের সময় মোট ১৮ জন পলাতক ছিলেন। পরে ৬ পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলে পলাতক আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ জনে।
কি ঘটেছিল সেদিন?
দেশে তখন বিরাজ করছে জোট সরকারের চরম সস্ত্রাস ও নৈরাজ্যতা,স্বাধিনতা বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্মিলিত অরাজকতা-বোমাবাজি।খুন-রাহাজানি-
ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনা। ট্রাকে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যাকে। নেতা-কর্মীও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ এবং পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভয়াল সেই হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি হারিয়েছেন তাঁর দু’কানের স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বেগম আইভি রহমান মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে একই বছরের ২৪ আগস্ট মারা যান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তিনি ২৮ নভেম্বর ২০০৬ সালে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েন ।
রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেন- শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (সবার প্রিয় আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঘাতক-সন্ত্রাসিদের বোমা-বুলেটের আঘাতে প্রাণ দেয়া এ শ্রেষ্ট সন্তানদের জাতি আজ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ ও কায়মনোবাক্যে তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে।
গ্রন্থনাঃ মোঃ নিয়াজুল হক কাজল, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক।
লেখক ও গবেষক। নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।