শফিকুল হাসান | বুধবার, ২৫ মে ২০১৬ | পড়া হয়েছে 3218 বার
নবীনগর উপজেলার অবহেলিত জনপদ কাজিমাবাদ (শালকান্দি নামে পরিচিত) গ্রামের ওস্তাদ চান মিয়া সরকার।
দীর্ঘ দিন ধরেই বাউল গানের মাঝে ডুবে রয়েছেন। একটা সময় গান গেয়ে বাউল গানের জলশায় উপস্থিত শ্রোতাদের মলিন মুখে হাসি কখনোবা চোখের কোনে জল নিয়ে আসার অসিম এক ক্ষমতা উনার মাঝে ছিল। গানের মুর্ছনায় ভাব জগতে ডুবে থাকা সে এক কঠিন সাধনা। ওস্তাদ চান মিয়া সরকারের গাওয়া গান শুনে অনেকেই একমত হয়েছেন, তার মাঝে সেই অসিম ক্ষমতা ছিল। তবে শিল্পী নিজেই বিশ্বাস করেন স্রষ্টার করুনা ছাড়া তিনি এতটা পথ আসতে পারতেন না।
এখন শিল্পী নিজেই দিনের বেশির ভাগ সময় শিল্পী তৈরিতে সুরের বিজ রোপনে ব্যস্ত সময় পাড় করেন। নবীনগর পৌর এলাকার ভোলাচংয়ে তার একটি গান শিখার প্রতিষ্ঠান ‘পায়েল সংগীত একাডেমী ‘ নামে ক্লাব ঘর রয়েছে। সেখানে বসে তিনি নিয়মিত তালিম দিয়ে যাচ্ছেন।
ওস্তাদ চান মিয়া সরকারকে নিয়ে নিচের লেখাটি লিখেছেন, শফিকুল হাসান।
আজকে লিখতে ইচ্ছে করছে একজন নিভৃতচারী প্রচার বিমুখ সংগীত শিল্পী, সুরকার, সংস্কৃতি পরিমন্ডলে বড় হওয়া সদা-হাসিখুশী, সহজ-সরল মনের মানুষ সম্পর্কে যিনি গান শিখিয়ে, গান গেয়ে মানুষের মনে দাগ কেটেছেন, হৃদয়ে নাড়া দিয়েছেন, তিনি আমাদের ওস্তাদ চান মিয়া সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া তথা নবীনগরের গানপ্রিয় মানুষের কাছে এক পরিচিত নাম। সুফী ঘরনার এই শিল্পী মহত্ত্বের
তপস্যায় সমর্পিত সত্যিকারের একজন বড় মাপের মানুষ। দীর্ঘ দিন যাবত সংস্কৃতি চর্চার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। মরমী কবি হাছন রাজা ছাড়াও সাধক কবি রাধারমন, বাউল কামাল পাশা, কবি হাবিব পাগলাসহ অনেক গীতিকারদের গান বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক আসরে পরিবেশন করে দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি। শিল্পির অসংখ্য গুণমুগ্ধের মাঝে আমিও একজন। শিল্পি তার গানে ফুটিয়ে
তুলেছেন আধ্যাত্ম্যবাদের বিশ্বাসে আলোকিত চেতনার আবেগ। তার সেই চেতনাকে মূর্ত করেছেন শব্দে, সুরে আর অনুভূতির অবয়বে। বিভিন্ন গানে ফুটে উঠেছে তার বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি, প্রকাশ পেয়েছে দৃপ্ত বিশ্বাস আর জীবনের গন্তব্য। জীবন থেকে নেওয়া নির্মম আর বাস্তব চির সত্য পরিণতিগুলোকে কথার মালায় সাজিয়ে তাকে সুরের পুথি দিয়ে গেঁথে জীবনের জন্য গেয়েছেন জীবনমুখী গান। এই শিল্পির কন্ঠে কোন এক অনুষ্ঠানে শুনেছিলাম কবিয়াল বিজয় সরকারের লেখা জীবনমূখী অনবদ্য এই গানটি “সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে” যা এখনো আমার হৃদয়ে বাজে। পালাগানের আসরে শিল্পির কন্ঠের বিচ্ছেদ ও আধ্যাত্মিক গানে শ্রোতাকুল হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে । আহারে! সুদূর অজপাড়া গাঁয়ের সবুজ ঘাসের বুক চিরে যখন ইট পাথরের শহরের চা স্টলে বেজে ওঠে শিল্পির কন্ঠের “তুমি জাননারে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা” (লেখা কবিয়াল বিজয় সরকার) তখন এক অর্বাচীন আমি কান পেতে থাকি ওই ভক্তি গানের পানে, মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে যাই। ব্যক্তি জীবনে শিল্পীর সততা, ভদ্রতা, শালীনতায় কোথাও বিন্দু পরিমান ত্রুটি নিন্দুকেরাও বলতে
পারবে না। সূদীর্ঘকাল থেকে শুধু সঙ্গীতের সাধনাই করে যাচ্ছেন তিনি। পরিবারের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী এই শিল্পী দীর্ঘদিন যাবত ভুগছেন অসুস্থতায়৷ পৌর মেয়র সহ আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকগণ যেন স্থানীয় সংস্কৃতির লালনে এইগুণীর সম্মানজনক পৃষ্ঠপোষকতা করেন সেই আবেদন জানাই৷এই লেখাটি শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরূপ পোষ্ট করছি আমার বন্ধুমহলের মাঝে। শিল্পি সুস্বাস্থ্য আর সুন্দর মন নিয়ে আমাদের মাঝে বেচে থাকুন অনন্তকাল।