এস এ রুবেল | শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ | পড়া হয়েছে 581 বার
ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও কিছু মানুষের ট্রল করা দেখে আঁতকে উঠি! ওয়াজের নামে এসব কি হচ্ছে! নিজেদের ধর্ম নিয়ে নিজেরাই অধর্মের করছি। অতিতের চিত্র ভিন্ন ছিলো, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধেও পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে কেউ কেউ।
যার যার অস্তিত্বে স্ব-স্ব ধর্মের সংস্পর্শতা রয়েছে। সবাইকেই এর গুরুত্ব, ভক্তি ও বিশ্বাস অটুট রেখে চলা উচিত। এখনতো ভক্তি যেন হাসির খোরাকে রুপ নিয়েছে। এ দেশে এক ধর্ম নিয়েই বিভিন্ন ঘরানার গ্রুপ বিভক্ত হয়ে গেছে। তর্কে জিততে নিজেদের ধর্ম নিজেরাই কুলশিত করার পায়তারায় লিপ্ত হচ্ছে।
ইদানিং ওয়াজের নামে হাসি ঠাট্টার যে চিত্র দেখছি তা উদ্বেগের! সঠিক জ্ঞানের অভাবে এসব হচ্ছে। শুরুতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ তথা গোটা আলেমসমাজ এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হলে চিত্র এতোটা ভয়াবহ রুপ পেতোনা। বলে রাখা ভালো, দেশের সিস্টেম ব্যবস্থায় হক কথার লোকেরা হয়রানি হচ্ছে বেশি। যে কারনে…..জান বাচানো ফরজ মনে করে নীরব থাকে তারা।
কয়েক বছর আগেও কোরআনের বিষয়ে দক্ষ ইসলামী আলোচক, প্রবীন আলেমদের অংশগ্রহণে ওয়াজ মাহফিল করা হতো। তখন প্যান্ডেল ভর্তি মানুষজন শীতের রাতেও আলোচনা শুনতে আসতো। আর এখন…..লাখ টাকার প্যান্ডেলেও বক্তা ও আয়োজকদের কয়েকজন ছাড়া শ্রোতাবিহীন ওয়াজ হচ্ছে আমি নিজেই এর উদাহরণ।
আমি মনে করি, ধর্মীয় আচরণ, বিধিনিষেধ মানা না মানার প্রভাব কিন্তু যে কোন ব্যক্তির পরিবর্তন আনে। খেয়াল করলে দেখবেন, ইদানিং ওয়াজের নামে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফাইজলামি শুরু করছে তাও আবার আলেম ওলামার লেবাশ ধরে। ভক্তি,বিশ্বাস তো দুরের কথা, ইসলামের অপব্যাখ্যায় ব্যঙ্গভাবে উপস্থাপন করার ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে ইসলাম ধর্ম নিয়েও ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে। খেয়াল করলেই দেখবেন,বক্তারা পাঞ্জাবী, টুপি লাগিয়ে শ্রোতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে ফানি স্টাইলে কথাবার্তা,অপরের বিরুদ্ধে গীবত গাওয়া,কিংবা জনপ্রিয় গানের কলি বিকৃত করে গাওয়া ছাড়া কিছুই করেনা। এখানে বক্তা মাঠ গরম করতে জোকারের ভূমিকা নেন,মুর্খ শ্রোতারা এসব দেখে আনন্দ পায়,দাত কেলিয়ে হাসে। আহারে আনন্দ, আহারে আবাল…আহারে বিনোদন। বুঝে না বুঝে ফাল দেয়ার মানুষগুলো আবেগপ্রবণ হয় বেশি। তারা বেশ ভুষা দেখেই গানাদার ব্যক্তিকে বিজ্ঞ আলেম ভাবতে থাকে। ইসলামের জ্ঞানের পরিধি শুন্যের কোঠায় লোকদের কথা শুনে অনেক সময় মারামারি করতেও পিছপা হয়না। অনেকটা আগেরকার দিনের বাংলা ছবিতে শাবানার কান্দন দেখে আবেগীদের চোখে জল আসার মতো। বুঝা উচিত,আবেগ দিয়ে যেমন জীবন চলেনা তেমনি ধর্মের মত স্পর্শকাতর বিষয়েও মনগড়া উপস্থাপন গ্রহণযোগ্য নয়।
একসময় যাত্রাপালা, বাউল গান, সাউন্ডবক্সের ধুমধাড়াক্কায় (ডিজে) কনসার্ট হতো, এখনো হয়। সেগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ওয়াজ মাহফিলেও এর রেশ চলে আসছে প্রায়।
ফেসবুকে দেখবেন,ওয়াজের নামে ফাইজলামি মার্কা বিনোদন বানিয়েও সোশ্যালমিডিয়ায় প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত তারা। সুরসুরির হেডলাইনে চমক লাগিয়ে আমাদেরকে এগুলো গেলাচ্ছে।
যেমন,’লেখাটা না পড়ে যাবেন না..’ ‘একটু পরেই আসছে আসল মজা..’ ‘লাখো লাখো শ্রোতার সামনে মৌলবী সাব একি বললেন!’ এটাইপের হেডলাইন দিলে পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়। টানটান উত্তেজনায় ভিতরে কি আছে দেখার ইচ্ছায় অখাদ্যকে গিলে নিচ্ছি আমরা।
দেখবেন দুই আড়াই বছরের বাচ্চাদের বক্তা বানিয়ে ওয়াজ করা হচ্ছে। ওয়াজ শুনবে কি ছোট বাচ্চা দেখেই শ্রোতারা বেহুশ হয়ে পড়ে।
আয়োজকেরা মনে করে, হাসাতে পারলেই ওয়াজ সফল। অবশ্য এসব বক্তার জনপ্রিয়তার পেছনে ফেসবুকই দায়ী বেশি। বিকৃত চিন্তার ভাবনাগুলো দ্রুত ভাইরাল হয়। ভাইরালের কারনে অযোগ্যরা দ্রুত আলোচনায় আসে। যেকারণে তারা ছিটকে পড়ার বদলে খ্যাতি পেয়ে যায় সহজে। এসব পোস্টের নিচে কি ধরনের মন্তব্য থাকে, আমি আপনি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি। কমেন্টবক্সে অশ্লিল শব্দ প্রয়োগে অনেকেই দেহের তাপ কমায়,দায়িত্ব পালন করে।
এভাবেই দেশ বিদেশে সুস্থ ভাবনার লাখ লাখ ফেসবুকার নিন্দা,গালি প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফল হয় উল্টো। অটোমেটিক প্রচার বেড়ে যাওয়ার ফলে গুগল থেকেও মাস শেষে ডলার কামিয়ে নেয় তারা। অসুস্থ বক্তারা এখন আলোচিত। ভালো বক্তারা তাদের অনুসরণ করে টিকে থাকার অনুসরণে ব্যস্ত। তবে প্রকৃতির পাওনা ঠিকই আদায় করে নিচ্ছে, দেখবেন, আজকাল ওয়াজ মাহফিল করতে প্রশাসনের বাধা থাকে প্রায়ই। কেন জানেন? ওইযে কামড়াকামড়ির কারনে। এই দায়িত্ব পালনের কারণেও এই পরিবেশ সৃষ্টির মুল কারন। মাহফিলে সভাপতির হামলা, মাওলানার কাপড় ছিড়লেন আওয়ামিলীগ নেতা, মাওলানার কথা শুনে ওসি ছুটে এলেন, এটাইপের হেডলাইনগুলো কিন্তু আকর্ষন করতে নই,বাস্তবতার চিত্র। অন্যায়ের খেশারত, যে মঞ্চে হাসাও, সেখানেই লাঞ্চিত হচ্ছো।
অনেকেই বলবে,আলেমদের সাথে এ কেমন আচরণ? আমি বলি, আলেম আর জালেম এ দুটোর সংজ্ঞা আগে জানা জরুরী।
বিঃদ্রঃ – হেডলাইনে কিছুটা সুড়সুড়ি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি অন্যভাবে দেখবেন না।
এস এ রুবেল
নবীনগর টুয়েন্টি ফোর ডটকম