এনামুল হক এনাম | মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০ | পড়া হয়েছে 741 বার
ছোটবেলা আমাদের এলাকায় কারো মাথা টাক করা বা কামানো হলে খনার বচন বলে খেপাতো সবাই,
“ঠোল্লা মাথা বেল বেল
রাখবা নি গো ভালা তেল।
ভালা তেলের কাম নাই
ঠোল্লা মাথার দাম নাই” ।
কিংবা,
“ঠোল্লা মাথা চার আনা
চাবি দিলে ঘুরেনা”
এখানে ঠোল্লা মাথা মানে মাথা ন্যাড়া করাকে বুঝানো হইছে।
টিনেজাররা বন্ধুদের সদ্য কামানো মাথায় একটু থুথু লাগিয়ে থাপ্পড় দেয়নি এমন কমই উদাহরণ আছে ! কামানো মাথায় সরিষার তেল দিলে মনে হয় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
বৃটিশরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করতো তখন বাঙ্গালী অফিসারেরা মাথা চুবিয়ে সরিষার তেল দিয়ে অফিসে আসতো । যার কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই অফিসের বসার চেয়ারের পিছনে কালো দাগ হয়ে যেতো। এরপর বৃটিশরা অফিসের চেয়ারে বড়ো করে টাওয়াল দিয়ে দিলো। যেনো তেলের কারণে চেয়ারে দাগ না লাগে। এরপর থেকে এখনো দেশের সব সরকারি অফিসারের চেয়ারে বড় টাওয়াল দেওয়া থাকে।
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর কিংবা গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বাচ্চাদের মা-বাবা একরকম জোর করেই মাথা কামিয়ে দিতো। এখনের যুগটা সেলুুনের । বাচ্চারা একটু বড় হলেই সেলুনের হাতলে কাঠ দিয়ে বসিয়ে বাহারি রঙ্গের চুলের কাট দেয় ডিজিটাল মা-বাবারা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এখন সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সবাই এখন ঘরকুনো। পাড়ার সেলুনটিও বন্ধ । ভেজাল শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, দূষিত পানি ব্যবহার করে বাংলাদেশী পুরুষদের মাথার চুলের অবস্থা এখন রুগ্ন অবস্থা। এই সুযোগে নতুন করে যদি আরো কিছু চুল গজায় সেই উদ্দেশ্যে দেশের আনাচে-কানাচে দলবেঁধে চলছে মাথা কামানোর উৎসব। মাথা কামানোর পর তা আবার ফেসবুক ছড়িয়ে দিচ্ছে সবাই। কোয়ারেন্টাইনে অনেকে আবার ১০হাজার, ৫হাজার কমেন্ট পড়লে মাথা কামাবে বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে।
ফেসবুক বন্ধুরাও কমেন্ট পূর্ণ করে মাথা কামানোর জন্য উৎসাহিত করছে । মাথা কামানোকে অনেকে আবার সেলুন বন্ধ থাকাকে কারণ হিসাবে দেখছেন। যারা সেলুনে কাজ করেন তারা সারাদেশে মাথা কমানো দেখে একটু বিমর্ষ কেননা একবার মাথা কামালে যে ৩-৪ মাস লেগে যায় পুনরায় চুল বড় হতে । সেলুন মালিকদের মনে মনে একটাই কথা ন্যাড়া যেন একবারই বেলতলায় যায় ।