মোঃ সোহেল আহমেদ | মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০ | পড়া হয়েছে 209 বার
টাইফয়েডের কারণে শিশুকালেই জিতেন্দ্রর দুটি পা বিকল (পঙ্গু) হয়ে যায়। পরিবার পরিজনের কাছে সে তখন হয়ে গেল বিশাল একটা বোঝা। কয়েকদিন আগেও যে ছিল বাবা মায়ের আদরের সন্তান। তখন উনারা তাকে বড় আদর করে জিতেন নামেই ডাকতো। আস্তে আস্তে পঙ্গুত্ব নিয়ে বড় হতে লাগল জিতেন, সংসারের অভাব অনটন তাকে ভীষণ কষ্ট দিত।
নিজের অক্ষমতা নিয়েই পরিবারের সদস্যদের বোঝা কমাতে বাড়ির পাশে কড়ইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় পড়াশোনা করতে। ইঞ্জিনের বিয়ারিং দিয়ে তিন চাকার একটি ছোট্ট গাড়ি বানিয়ে তার উপর একটি বাঁশের পাতি তে করে বই, আর সামান্য পরিসরে বাচ্চাদের খাবার জিনিস নিয়ে দুই হাতের আর হাঁটুর উপর ভর করে স্কুলে যেত সে।
উপস্থিত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে স্কুল শুরুর আগে একপাশে বসে ঐ সব খাবার সামগ্রী বিক্রয় করতো সে। স্কুল শুরু হলে সব বন্ধ করে সেও ক্লাসে ঢুকে যেতো, ফ্লোরে বসেই সে পড়াশোনা করতে চায়।
শিক্ষকরাও তাকে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করতো। এইভাবেই সে প্রাইমারি স্কুলের পাশে দীর্ঘ দিন ব্যবসা করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করে গেছেন সেইসাথে সামান্য পড়াশোনাও।
শারীরিক প্রতিবন্ধী অবস্থায় জীবনের বাকি দিন গুলো সে কিভাবে কাটাবে ? তাই সে অবসর সময়ে প্রতিবেশী নিকটাত্মীয় কাছে গিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে কুটির শিল্পের কাজ শিখতো।
বার বছর বয়সেই সে বেশ কয়েকটি কাজ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সে আয়ত্ব করে নেয়। জীবন যুদ্ধে এভাবেই চলছে দিন রাত,বছরের পর বছর। এইভাবেই প্রতিটা দিন রাত কষ্ট করে কুটির ও হস্তশিল্পের কাজ করে পরিবারের পাশে থেকে ব্যাপক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন জিতেন্দ্র সরকার।
তিন বোন আর চার ভাইয়ের পরিবারে সে কখনো বোঝা হয়ে থাকতে চায়নি। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ আর আত্মসম্মান বোধের কারণে দিনরাত খেটেছেন নিজের শারীরিক অক্ষমতা থাকার পরও, তবুও কারো কাছে ভিক্ষাবৃত্তি করেননি জিতেন।
হস্তশিল্পের কাজ করে তিনি প্রতিমাসে যায় আয় আয় করেন তা দিয়ে পরিবার সুন্দরভাবে চললেও জীবদ্দশায় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে সুখ দেখে যেতে এখনো সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, নিজের প্রস্তুতকারী পণ্যগুলো নিয়ে নিকটস্থ হাট বাজারে যেতে অনেক কষ্ট হয় বলে জানান তিনি।
আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন জিতেন পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হেরে যাওয়া কি কারো কাছে ভালো লাগবে? যেখানে অর্থবিত্ত নিয়েও এই সমাজে মানুষ অমানুষ বর্বর হয়েও থাকতে দেখা যায়। সেখানে জিতেন্দ্র সরকার তো একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই মানব সভ্যতার জন্য।