মাসুক হৃদয় | সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৬ | পড়া হয়েছে 2164 বার
নদীর কিনারে কিংবা বুকে গাছের ডালপালা ফেলে, চারদিকে বাঁশ পুঁতে এর মধ্যে আটকানো হয় কচুরিপানা। পরে জাল দিয়ে এটিকে ঘিরে দেওয়া হয়। মাছ আটকাতে এভাবেই তিতাস নদীজুড়ে অবৈধ ‘ঘের’ তৈরি করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
‘জাল যার, জলা তার’- সরকারি এমন নীতির পরিবর্তে ‘জোর যার, জলা তার’ নীতির বাস্তবায়ন ঘটছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গোকর্ণ ঘাট থেকে নবীনগর উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার নদীপথে চারশ’রও বেশি মাছের ঘের তৈরি করেছে প্রভাবশালী মহল। এছাড়া জেলার ছয় উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীটির বিভিন্ন স্থানে শত শত ঘের তৈরি করে মাছ ধরছে প্রভাবশালীরা।
এসব ঘের নির্মাণের ফলে তিতাসের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে পলি জমছে নদীতে। ফলে নাব্যতা হ্রাসের পাশাপাশি মাছের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র সীমিত হয়ে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
জানা যায়, তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা অংশে অন্তত দুই শতাধিক মাছের ঘের তৈরি করেছেন স্থানীয় নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রভাবশালী গ্রাম সিন্দুরার লোকজন। নদীতে মাছের কৃত্রিম অভয়ারণ্য তৈরি করে অবাধে মাছ শিকার করছে এসব ঘেরের মালিকরা। এতে স্থানীয় জেলেরা হয়ে পড়ছে বেকার।
তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা অংশের শালগাঁও-কালিসীমা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর দুই কিনারে বিশাল জায়গাজুড়ে বাঁশ পুঁতে চারপাশে জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া। বেড়ার ভেতরে কচুরিপানা আটকে রাখা। সেখানে কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে ঘেরের দেখভাল করছিলেন সিন্দুরা গ্রামের সিরাজ মিয়া।
ঘের বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজ মিয়ার সরল স্বীকারোক্তি, ঘের দখল কইরা নিছি। ৫০/৬০ হাজার ট্যাহা (টাকা) খরচ অইছে।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার সবাই এমনভাবে যে যার মতো ঘের বানাচ্ছেন নদীতে। ঘের যার, মাছ ধরার অধিকারও তার। অন্য কেউ এখানে মাছ ধরতে পারে না। গত বছর এই ঘের থেকে তিনি আড়াই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন বলেও জানান।
এভাবে পেশীশক্তির কাছে নদী দখল হয়ে পড়ায় স্থানীয় জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। গোকর্ণ গ্রামের মালোপাড়ায় গিয়ে কথা হয় কয়েকজন জেলের সঙ্গে।
তারা জানান, এই মালোপাড়াতেই জন্ম ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের রচয়িতা কালজয়ী ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের। তার রচনায় তিতাসের যে রূপ উল্লেখ করা আছে তার সিকিভাগও এখন নেই বলে জানালেন তারা।
মালোপাড়ার বাসিন্দা নির্মল বর্মণ জানান, নদীর বেশিরভাগ অংশই দখলে। যে অংশটুকু সাধারণের জন্য উন্মুক্ত, তাতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। ফলে তাদের পাড়ার বেশিরভাগ পুরুষের সময় কাটে আড্ডা-আলসেমিতে।
গোকর্ণ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলে নৌকাগুলো নদীর কিনারে উল্টো করে রাখা। পাশে বসে কেউ কেউ জাল বুনছে।
এই পাড়ার ঠাকুর চাঁন বর্মণ বলেন, আমাদের পাড়ায় প্রায় শ’খানেক জেলে পরিবারের বাস। এসব পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই বাপ-দাদার পেশা (মাছ ধরা) ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পাড়ার রবীন্দ্র মল্ল বর্মণ কিছুদিন আগেও জাল টানতেন। তিনি এখন দর্জির কাজে যোগ দিয়েছেন। তার ছেলেরাও মাছ ধরা ছেড়ে সেলুনে কাজ নিয়েছেন।
তিতাস নদীতে মতো উন্মুক্ত জলাশয়ে অবৈধ ঘের দেওয়া প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, উন্মুক্ত জলাশয় উন্মুক্তই থাকার কথা। কিন্তু সেখানে স্থানীয় একটি সুবিধাভোগী মহল এসব অবৈধ ঘের বানায়। বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার পর শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমে যখন কচুরিপানা জমে, তখন এই ঘের বানানো হয়। বিষয়টি জানতে পারলে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে তা অপসারণ করে। তবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেখা গেল, প্রশাসন কিছুদিন কিছু না বললে তারা আবার ঘের গড়ে তোলে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ |
১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ |
২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |