ডেস্ক রিপোর্ট | বুধবার, ১৩ জুলাই ২০১৬ | পড়া হয়েছে 2367 বার
রাজধানীর গুলশান-২ এর হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিখোঁজ ১০ যুবকের ছবিসহ নাম প্রকাশ তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ুইবাড়ি গ্রামে বাসিন্দা সুজিত দেবনাথের ছবি রয়েছে।
তালিকায় ওই ১০ যুবকের মাঝে একমাত্র ধর্মান্তরিত মুসলিম সাইফুল্লা ওজাকি। তিনি এলাকায় সুজিত দেবনাথ হিসেবে পরিচিত। সুজিতের বাবা জনার্ধন দেবনাথ ওই ইউনিয়নে জিনদপুর বাজারে কাপরের ব্যবসা করেন। তিনি এখনো জানেন না তার ছেলে নিখোজ রয়েছেন। গত এক বছরের ভিতরে তার ছেলের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেয়।
তিনি বলেন, গত ১৪ মাস আগে সুজিতের সাথে আমার শেষ দেখা হয়। সুজিত জাপানে থাকে সেখানেই হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জাপানি এক মেয়েকে বিয়ে করে মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি নাম ধারণ করেন । বর্তমানে সুজিত ওরফে সাইফুল্লাহ চার ছেলে এক কন্যা সন্তানের জনক। সুজিতের বাবা জনান, জাপান চলে যাওয়ার পর গত এক বছর আগে ফোনে সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার, এর পরে আর সে খোজ নেয়নি। দুই ভাই এক বোনের মাঝে সুজিত সবার বড়। অনেক আগেই তার ছোটভাই মারা যায়।
লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল সুজিত। জঙ্গী হামলার সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে নিখোঁজ ১০ যুবকের ছবির তালিকাতে সে আছে এ কথা ওই ইউনিয়নের কেউ মানতে পারছেন না। ছোট বেলা থেকেই সে খুব চুপচাপ স্বভাবের ছিল। লেখা পড়ায় ছিল যথেষ্ট মেধাবী তার বাড়ির আশেপাশের লোকজনের বক্তব্যে অতটুকুই মিল পাওয়া গেছে।
সুজিত জিনদপুর ইউনিয়নের হুরুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনীর পাঠ চুকিয়ে লাউর ফতেহপুর কেজি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। পরে সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন।
সুজিত ২০০৩ সালের দিকে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে দেশটিতে গিয়ে সেখানকার Ritsumeikan university ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করছেন।
তার সহপাঠী লতিফ এরশাদ এখনো মেনে নিতে পারছেন না সুজিত জঙ্গী হামলায় সম্পৃক্ত।
লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রুপালী ব্যাংকের পরিচালক ব্যারিস্টার জাকির আহমেদ অনলাইন মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরে ফেসবুকে উল্ল্যেখ করেন ‘সজিতের মতো একটা মেধাবী ছেলে এভাবে ধ্বংস হয়ে গেল যা অত্যন্ত দুঃখ জনক। সে আমার ছাত্র ছিল। সজিত,শফিকুল ও আলমগীর ওরা অনেক মেধাবী ছিল।আমি ওদের পড়িয়েছি’।
জিনদপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল হক বলেন,খুবই বেদনাময় এই সংবাদ, একটা উজ্জ্বল নক্ষত্রের অন্ধকার তিমিরে হারিয়ে যাওয়া।
কলেজ ছাত্র শফিকুল ইসলাম সুজিত প্রসঙ্গে বলেন, ছোট বেলা থেকে শুনতাম উনি অনেক মেধাবী ছিলেন এবং তার ছোট ভাইও অনেক মেধাবী ছিল।
তার বিরুদ্ধে এলাকায় নাশকতামুলক কোন কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ না পেলেও অন্য এক সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ ধারায় মামলা হলে এর তথ্য যাচাইয়ে নবীনগর থানায় অনুসন্ধানের জন্য বলা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ আহম্মেদ পি পি এম নবীনগর টুয়েন্টি ফোর ডটকম‘কে জানান, আমরা তদন্ত করে নাম-ঠিকানা যাচাই করে পাঠিয়েছিলাম।
তবে সুজিতের গ্রামের সবাই তাকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে চেনে । এর বাইরে গ্রামে খুব একটা না আসায় গ্রামবাসী তার ব্যাপারে আর কিছুই বলতে পারেনি।
ছবিতে ১/ সুজিতের শৈশবে থাকার ঘর। ২/ হুরুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করেছে।
৩/ লাউর ফতেহপুর কেজি উচ্চ বিদ্যালয় এখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। ৪/ সুজিতের ছবি