স্বপন মিয়া | মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০১৭ | পড়া হয়েছে 1903 বার
বড় ভাই যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে, ছোট ভাই পড়ে সিক্সে। বৃত্তিপ্রাপ্ত, ক্লাসের ফার্স্ট বয় পল্লব। বড় ভাই সোহাগও বেশ মেধাবী, প্লেজধারী। এমন সময় হঠাৎ বাবা মারা যায় তাদের। তিন ভাই বোন ও মাকে নিয়ে ঘোর বিপাকে পড়ে যায় সোহাগ। ছোট ভাই পল্লব আর পরিবারের কথা ভেবে নিজের কাঁধের বই ফেলে মাছের ডালা তুলে নেয় সোহাগ। বাজারে বাজারে মাছ বিক্রি করে চালায় সংসার ও পল্লবের পড়ালেখার খরচ।
ছোট ভাই পল্লব চন্দ্র দাসও দিয়েছে ভাইয়ের কষ্টের প্রতিদান। এস. এস. সি ও এইচ. এস. সি. তে দারুন সাফল্যের পর এ বছর স্থান করে নিয়েছে দেশ সেরা বিদ্যাপিঠ ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে’। সেদিনের পল্লব আজ বিকশিত, উদ্ভাসিত। বড় ভাই সোহাগের কতো ঘাম ঝরেছিলো কে জানে! তবে ছোট’র এ সাফল্য নিশ্চয় ম্লান করে দিয়েছে সব ক্লান্তিতা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের ভোলাচং দাশ পাড়ার বাসিন্দা সোহাগ। সংসার কি? এটুকু উপলব্ধি করার আগেই তাকে এর হাল ধরতে হয়েছে। পিছপা হয়নি সে। সাতসকালে কাক ডাকা ভোরের আলো ছড়ানোর আগেই সে মাছের ডালা নিয়ে হাজির হয় ইব্রাহিমপুরের বাশবাজার নয়তোবা আলিয়াবাদ তঞ্জব আলীর মার্কেটে।কতদিন বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না সে তার হিসেবও জানা নেয় তার। এতকিছুর পরও স্বল্প পুজির ব্যবসায় তৃপ্তির আয় তার হয়না।এভাবেই ছোট দুই ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ সাংসারিক নিত্য আহারের ব্যবস্থা সব মিলিয়ে টানাপোড়নের মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলছে সোহাগ।তার ভাবনা পরিশ্রম একদিন স্বার্থক হবে। এ স্বপ্ন এখন দিনরাত সোহাগের চোখে খেলা করে।
আবার অনেক সময় ভয়ে আতকে উঠে সে। ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করাটা অনেক টাকার ব্যাপার।সে কি পারবে এর শেষ দেখতে। ছোট ভাইয়ের স্বপ্ন পুরন করতে। তার এ গোছানো স্পষ্ট ভাবনার মাঝে হঠাত করেই ঘোলাটে ভাব চলে আসে………..
আমরা কি পারি না এ পল্লবদের পাশে দাঁড়াতে? এ রকম হাজারো পল্লবদের ঝরে পড়া রোধ করতে?
পল্লবরা মুকুলিত হোক, তারা নয় বরং ঝরে পড়ুক তাদের সব বাঁধা বিপত্তি। স্যালুট তোমায় সোহাগ, স্যালুট।