মুহাম্মদ মনিরুল হক | বুধবার, ০৪ মে ২০১৬ | পড়া হয়েছে 1188 বার
সন্ধ্যা পর্যন্ত রহিছ উদ্দিনের মনে হচ্ছিল তার রুমটাতে জানালা আছে। এখন মনে হচ্ছে সে জানালাবিহীন একটা বদ্ধঘরে বসে আছে। কখনো মনে হচ্ছে এই রুমের কোন দরজাও নেই। তার মাথার সামনে কপাল বরাবর আধাহাত উপরে একটা বাল্ব জ্বলছে। সামনে একটা শূন্য কাঠের চেয়ার। রহিছ উদ্দিনও কাঠের চেয়ারে বসে আছে। তার বিপরিত দিকের চেয়ারে দুটো হাতল। তার চেয়ারের হাতল একটা। রহিছ উদ্দিনের মনে হচ্ছে একটা হাতল রাখার কি দরকার ছিল। হাতল দুইটাই ভেঙ্গে ফেলতি। তার ধারণা ২০০ পাওয়ারের বাল্বের গরমে যতটা কষ্ট তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এক হাতওয়ালা চেয়ারটার কারনে। চেয়ারের দুটি হাত থাকলে বা একটিও না থাকলে হয়ত রহিছ উদ্দিনের এতটা ঘাম হতোনা। অবশ্য রহিছ উদ্দিন এখন আর ঘামছেও না। শরীরের ঘামগুলো শুকিয়ে কেমন যেন একটা খসখসে ভাব চলে এসেছে। রহিছ উদ্দিনের হঠাৎ মনে হল তার নাকের ডগা দিয়ে একটা মাছি উড়ে গেল। আর তখনি মাথার উপর ঝুলে থাকা বাল্বটা নিভে গেল। রহিছ উদ্দিনের মনে হল হঠাৎ করে সে যেন বর্ষার কুচকুচে কালো পানিতে ডুবে গেল। যে পানিকে হিজলের নুয়ে পড়া ডালটা ছুই ছুই করেও ছুতে পারেনা। এমন সুখও এই পৃথিবীতে আছে! রহিছ উদ্দিনের সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আবার লাইট জ্বলে উঠল। তবে এবার মাথার উপরের আগুন রঙা বাল্বটা জ্বলে নি। নরম আলোর টিউবলাইট জ্বলছে। রহিছ উদ্দিন এদিক ওদিক তাকিয়ে মাছিটাকে খুজছে। ক্যাচ করে দরজায় শব্দ হল। রহিছ উদ্দিন দরজার দিকে তাকাতে গিয়েও তাকালো না। শব্দ হওয়ার অনেকক্ষণ পর একজন দরজা দিয়ে রুমে প্রবেশ করল। আন্তরিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন? রহিছ উদ্দিন বলল, ভালো আছি, যা গরম পড়ছেরে ভাই। লোকটির কপাল খানিকক্ষণের জন্য কুঞ্চিত হল। তবে লোকটির চোখে সানগ্লাস থাকায় কুঞ্চিত ভাব পুরোপুরি বুঝা যায়নি। রহিছ উদ্দিন ভেবে পাচ্ছে না রাতের বেলা তার চোখে কালো চশমা পড়ার দরকারটা কি। লোকটি রহিছ উদ্দিনের সামনের চেয়ারে বসল। রহিছ উদ্দিন বলল, স্যার আমার বন্ধুরা কই? -কোন বন্ধুর কথা বলছেন? -পুলিশ বন্ধুরা। যারা আমাকে ধরে এনেছে। রহিছ উদ্দিনের কথার মাঝেই লোকটি প্রশ্ন করল, তোর নাম কি? রহিছ উদ্দিনের মনে হল সে ভুল শুনেছে। লোকটি এতক্ষণ তাকে আপনি করে বলছিল। রহিছ উদ্দিন লোকটির দ্বিতীয় কথার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু লোকটি কিছু বলছে না। লোকটি আবার আন্তরিক ভঙ্গিতে বলল, তা রহিছ ভাই কেমন চলছে দিনকাল? রহিছ উদ্দিন লোকটির সাথে সুর মিলিয়ে বলল, আর দিনকাল; এক মাছির যন্ত্রণায় আর বাচি না। আচ্চা আপনি কি এই রুমে কোন মাছি দেখেছেন? লোকটি রহিছ উদ্দিনের দিকে দৃষ্টি রেখেই ক্ষীণ গলায় ডাকল, রশিদ। প্রায় সাথে সাথে পনের ষোল বছরের এক কিশোর ঢুকল রুমে। লোকটি রহিছ উদ্দিনের দিকে ঝুকে ক্ষীণ গলায় বলল, রহিছ ভাই আপনি মজার মানুষ। আপনাকে আমার ভাল লেগেছে। আসুন আমরা কিছুক্ষণ মজা করি। রশিদের হাতে একটা সুই আছে। রশিদ আপনার পায়ের আঙ্গুলের নখের নিচে একটুখানি সুই ঢুকাবে আপনি বলবেন, যা গরম পড়ছেরে ভাই। রশিদ সুইটা আরেকটু ঢুকাবে আপনি বলবেন, আমার পুলিশ বন্ধুরা কই। এবং ফাইনালি সুইটা যখন পুরোপুরি ঢুকে যাবে আপনি বলবেন, আর দিনকাল; এক মাছির যন্ত্রণায় বাচি না। লোকটি আবার রশিদ বলে ডাকল। রশিদ প্রায় সাথে সাথে রহিছ উদ্দিনের পায়ের কাছে বসে পড়ল যেন সে ডাকের অপেক্ষায় ছিল। রহিছ উদ্দিন রশিদের দিকে তাকালো। দূর থেকে তাকে কিশোর মনে হলেও রহিছ উদ্দিন এখন রশিদের বয়স অনুমান করতে পারছে না। রশিদ রহিছ উদ্দিনের ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখের নিচ দিয়ে খানিকটা সুই ঢুকিয়ে দিল। রহিছ উদ্দিনের মনে হল সুইটা তার আঙ্গুলে ঢুকানো হয়নি। সুই ঢুকানোর সাথে সাথে তার বাম চোখের নিচে যেন একটা খোচা লাগল। তার চোখের ভিতরটা কেপেঁ কেপেঁ উঠছে। লোকটি রহিছ উদ্দিনের কানের কাছে এসে বলল মাছি কি? রহিছ উদ্দিন চোখ বুঝে আছে কিছু বলছে না। এবার লোকটি ঘর কাপাঁনো ধমক দিল, বল মাছি কি? ধমকের সাথে সাথে সুইয়ের আরেকটু অংশ রহিছ উদ্দিনের আঙ্গুলে ঢুকে গেল। রহিছ উদ্দিন প্রথমে চিৎকার করে পরে নেশাগ্রস্তের মত বলে চলল, মাছি একটি গৃহপালিত পাখি। ইহা ঘুমের সময় মানুষকে শুরশুরি দিয়ে থাকে। ইহারা রাতের বেলা তেমন চলাফেরা করে না। আমার একদিন মাছিদের সাথে কথা হয়েছিল। রহিছ উদ্দিন বিড়বিড় করে কথা বলতেই থাকে।১ম খন্ড