শাহাদাত হুসাইন | মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই ২০১৬ | পড়া হয়েছে 1458 বার
সেই ২০০৮ সালের জানুয়ারীতে নাম লিখিয়েছি প্রবাসের খাতায়।একে একে কেটে গেল মুল্যবান আটটি বছর ।স্বজনহীন প্রবাসের এই আট বছরে তিনটি ঈদ করেছি স্বজনদের সাথে দেশে। বাকি সবগুলো ঈদ এই প্রবাসে।দেশের মত এখানেও আকাশে ঈদের চাঁদ উঠে , ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়।নামাজ শেষে বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করি। কিন্তু দেশের সেই প্রশান্তি অনুভব হয়না। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আকাশের চাঁদ খুজে ফিরিনা। এখানে মসজিদের মাইকে কেউ ঘোষনা করেননা ঈদ মোবারক আগামীকাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। আমাদের ঈদগাহে আগামীকাল সকাল……………ঘটিকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে কোন পূর্ব ঘোষনা দেওয়া হয়না। এখানে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে কেউ দাওয়াত দেয়না।নামাজ শেষে রং বেরংয়ের আইটেমের খাবার সাজিয়ে কেউ অপেক্ষা করেনা আমাদের জন্য। দল বেধে কেউ আসেনা ঈদের সালামী নিতে।এখানে ক্যালেন্ডারের লিখা দেখে ঘড়ির টাইমে যেতে হয় ঈদগাহে।নামাজ শেষে সবুজ অরেন্যে ঘুরে ফিরে আনন্দ করা হয়না। সুযোগ থাকলেও ইচ্ছে থাকেনা। আবার ইচ্ছে থাকলে সুযোগ হয়না। আমি আমরা আনন্দ করলে যে দেশে থাকা ভাই-বোন ছেলে-মেয়েদের আইফোন কিনার টাকা হবেনা। ঈদের মার্কেটই বা করবে কিভাবে?সময়ের নিয়মে ঈদ আসে ঈদ যায় প্রবাসীরা প্রবাসীই থেকে যায়।তারপরও প্রবাসের ঈদ স্মৃতির এ্যালবামে জমা থাকে কিছু কথা সে রকম কিছু কথা আমারও আছে।শোনবেন আপনী? আমি আবার কষ্টের কথাগুলো কষ্টের রং মেখে লিখতে পারিনা।আকর্ষনীয় বেতন আর আরামের চাকুরীর লোভ সামলাতে না পেরে শিক্ষকতার মহান পেশা ছেড়ে প্রবাসী হয়েছিলাম। এখানে এসে দেখতে পেলাম অনেক পরিশ্রমের কাজ। অনেক চেষ্টা তদবীরের পর অল্প কদিনেই আল্লাহ পাক মসজিদে ইমামতির ব্যাবস্থা করলেন। বেতন কোম্পানী থেকে যা পাবো তাই। বাড়তি হিসেবে পাবো বছরে রমজান শেষে একটি বোনাস যা তখনকার হিসেবে প্রায় ১লক্ষ৮০ হাজার টাকা।অফারটা মন্দনা আমিও রাজি হয়ে গেলাম।সবকিছুই চলছে হিসেবে মতো।শুরু হল রমজান মাস আর কদিন পরই আমার বোনাস পাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে আমার আরো দুটি কাজ মিলেছে বেতন ভিত্তিক একটি দোকান পরিচালনা করি এবং মাদরাসার ২৮জন ছাত্রকে দিনে ২ঘন্টা কোরআন শরীফ পড়াই। ২৭শে রমজানে তারাবীতে আমার কোরআন খতম শেষ হবে বাংলাদেশী একজন মুসল্লী এসে আমার খোব প্রশংসা করে হাতে এক কেজি মিষ্টির দাম দিয়ে বললেন আমিও সাথে কিছু দিয়ে যেন সবার জন্য মিষ্টি কিনে আনি । হায়রে মুসল্লী সারা মাস কষ্ট করলাম আমি খুশি হলেন তিনি আর মিষ্টি খাওয়াবো আমি। কি আর করা সেদিন মিষ্টি লেগেছিল ১০কেজি। মাস শেষ বোনাসের সময় হল। দায়িত্ব্যরত অফিসারের কাছে গেলাম (উল্লেখ্য মসজিদটি একটি সরকারী ফ্যাক্টরীর অধীনে)তিনি আরো উল্টো কথা শুনিয়ে দিলেন। দোকানের চাকুরী,মাদরাসার ছাত্র পড়ানো আর কত চাই আমার? আমি স্তব্দ হয়ে গেলাম আচ্ছা আমাকেতো বলা হয়েছে ঈদ বোনাস দিবেন এবং এইটা কারো ব্যাক্তিগত ফান্ড থেকে নয় সরকারী ফান্ড থেকে দেওয়া হবে। বোনাসটা আমার প্রতি কোন করুনা করে নয় অতীতে যারা ছিলেন তারাও পেয়েছেন। আমার বেলায় এই বৈষম্য কেন? থলের বিড়াল বেড়িয়ে এল আমারই কিছু স্ব-দেশী ভাই উপরস্থ অফিসারকে বুজিয়েছেন।আমি অনেক টাকা ইনকাম করি এই বোনাস দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শেষ পর্যন্ত ঈদ বোনাসটা পেলামনা ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হল।এরপর সেখানে আরো দু-বছর ছিলাম। এখন আছি প্রিয় নবীজির (সাঃ) শহরে। প্রতি বছর ঈদ আসে ঈদ যায় প্রতিশ্রুতি ভংগের সেই ঈদ স্মৃতি আমাকে এখনো কাঁদায়।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ |
১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ |
২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |