এস এ রুবেল | শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৬ | পড়া হয়েছে 2288 বার
উপজেলার রছুল্লাবাদ ইউনিয়ন ও পাশের সাতমোড়া ইউনিয়নের ৬ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা রছুল্লাবাদ (পুর্বপাড়া) গ্রামে যমুনা খালের (মেঘনা নদীর শাখা) উপর একটি বাশের সাকো। এ বাশের সাকোর উপর দিয়ে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ প্রতিদিন শতশত গ্রামবাসী জীবনের ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করে থাকে।
সাতমোড়া ইউনিয়নের বড় শিকানিকা, ছোট শিকানিকা,পদ্দনগর,কাজেল্লা সহ রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের রছুল্লাবাদ পুর্বপাড়া ও দক্ষিনপাড়ার শতাধিক পরিবারের লোকজনের যাতায়াত এ বাশের সাকোর উপর দিয়ে। একটি মাত্র বাশ দিয়ে তৈরী এ সাকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশু কিশোর ও বৃদ্ধারা।
গ্রামবাসীরা জানান, প্রতিদিন স্কুল,কলেজ ও হাট বাজার ও নিত্য চলাচলে হাজারো পথচারী ঝুকি নিয়ে সাকোর উপর দিয়ে পথ চলে। তিক্ত অভিজ্ঞতা ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ছাড়াও এ সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকেই প্রান হারিয়েছে বলে জানান রছুল্লাবাদ পুর্বপাড়া গ্রামের মোরশেদ মিয়ার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম। আনুমানিক ৬৫ বছরের ওই মহিলা জানান, হাক্কা দিয়া কত পার অওন যায়। এন্দা একটা বিরিজ (ব্রিজ) করতারেনা। তিনি জানান, গত বছর এই সাঁকো পার হতে গিয়ে তার ৭ বছরের নাতিন সোহাগী আকতার পানিতে ডুবে মারা গেছে। সে সময় সাঁকো পার হচ্ছিলেন একই গ্রামের খন্দকার নাজনু মিয়া, আব্দুল হাকিম, মোঃ মুজিবুর মিয়া তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সাকোর পরিবর্তে এখানে সেতুর গুরুত্ব আছে কি? এর প্রতি উত্তরে তাদের বক্তব্য শুনে অনুমান করা যায়,স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ অঞ্চলে একটি সেতুর অভাবে আজো তাদের জীবনধারার পরিবর্তন হয়নি। যার কারনে সাঁকো নামক পারাপারের মাধ্যমটুকু স্থানীয়দের বিষিয়ে তুলেছে ।
এলাকার বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসাবে শেখ আবুল হোসেন (হানিফ) বেশ পরিচিত। তিনি নরসিংদি জেলার মাধবদী এলাকায় স্থায়ীভা্বে বসবাস করলেও প্রায়ই গ্রামে আসেন। এলাকার মানুষজনের খোজ খবর নেন। তিনি এলাকায় যতবার আসেন,এলাকাবাসীর এ দুর্ভোগের বিষয়টি তাকে পীড়া দেয়। সে কারনে চলতি সপ্তাহে গ্রামে এসে বিভিন্ন গনমাধ্যমকর্মীদের আমন্ত্রণ জানান তার এলাকায়। আজ শুক্রবার (২৬/১১) নবীনগরের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক সেখানে যান।
সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে সাকোর দুই পাড়ে জড়ো হয় শতশত জনতা। তাদের একটায় দাবী সাকোর পরিবর্তে সেতু চায়। তারা জানালেন, বড় শিকানিকা, ছোট শিকানিকা,পদ্দনগর,কাজেল্লা সহ আরো কয়েক গ্রামে নিজস্ব কোন হাট না থাকায় তারা সেতু পার হয়েই রছুল্লাবাদ বাজারে এসে দৈনন্দিন চাহিদা মেটায়। এছাড়াও এখানে হাইস্কুল, মাদ্রাসা না থাকায় তারা দুরবর্তী এলাকায় গিয়ে পাঠদান করতে হয়। এতে করে বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় সাঁকো ব্যতিত তারা পথ চলতে পারেনা।
রছুল্লাবাদ গ্রামের বাসিন্দা জাবেদ,সৌরব ব্যরিস্টার জাকির কলেজের শিক্ষার্থী। তারা জানালেন,সল্প সময়ে কলেজে আসা যাওয়ায় সাঁকো ব্যবহার নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। অন্যথায় বিকল্প পথে কলেজে আসা যাওয়া করতে গেলে রছুল্লবাদ থেকে সিএনজি কিংবা অটোতে ভাড়া খরচ পরবে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশত টাকা। যাকিনা যে কোন শিক্ষার্থীদের জন্য অসম্ভব।
গ্রামবাসীদের অনেকেই আক্ষেপের সুরে বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কাছে আসে ভোট নিতে। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেয় আমাদের যাতায়াতের পথে ব্রীজ নির্মাণ করে দেয়ার। কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ আর গ্রামবাসীদের খোজ-খবর নেয় না। তারা জানালেন ২০১১ সালের দিকে স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় সে সময়ের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবিএম তাজুল ইসলাম তাজ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়াকালে তিনি দুই ইউনিয়নের মাঝামাঝি যমুনা খালের উপর সেতু নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যা’কিনা পাচ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।
রছুল্লাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সদস্য খন্দকার শুকরান জানালেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যেখানে সব কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে এ এলাকায় এর ছিটেফোটা না পড়ায় এখনো অবহেলিত জীবন পাড় করছেন তারা। তিনি সহ গ্রামবাসীর প্রানের দাবী এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণ করে অর্থনৈতিক দিক ও শিক্ষা ব্যবস্থা চাঙ্গা করতে সংশ্লীষ্ঠদের এগিয়ে আসা উচিত।
রছুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, তিনি এর আগের বার এ পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে সয়েল টেস্ট করে এস্টিমেন্ট এলজিইডি দপ্তরে পাঠিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সেতু নির্মানের বিষয়টি বাস্তবায়ন পক্রিয়ায় রয়েছে। খুব দ্রুত এর বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে এলজিইডি উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম এর মোবাইল ফোনে একাদিক বার ফোন দিয়েও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।