অনলাইন ডেস্ক | শনিবার, ১০ মার্চ ২০১৮ | পড়া হয়েছে 1422 বার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে একটি খুনের ঘটনায় অর্ধশত ঘর-বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ভাঙচুর আর লুটপাটের ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ওই গ্রামের অনেক পরিবার। পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ৩ মার্চ লক্ষ্মীপুর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এর জের ধরে দুলাল মিয়া (৪০) নামে এক ব্যক্তি খুন হন।
দুলাল নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাণ্ডব চলে ওই গ্রামের খাঁ বাড়ি, ভূঁইয়া বাড়ি, হুরাগাজীর বাড়ি, কাতাইরা বাড়ি ও লাডুর বাড়িতে। এসব বাড়ির সব ঘরেই ধ্বংস আর লুটপাটের ছাপ রয়েছে। হামলার পর থেকে নারী-শিশু ছাড়া দেখা মেলে না কোনো পুরুষের। তবে নিঃস্ব হয়ে পড়া এসব মানুষগুলোর অনেকেই বিরোধের জেরে খুনের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।
কাতাইরাবাড়ির জহুর মিয়ার স্ত্রী হাছেনা বেগম জানান, তার স্বামীর চলাফেরার মত শক্তি নেই। এক ছেলে আট বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আছে। আমাদের ঘরে ঝগড়া করার মত কোনো লোক নেই কিন্তু আমাদের ঘরে ভাঙচুর করে জায়নামাজ পর্যন্ত লুটে নিয়ে গেছে।
ওই বাড়ির ফরিদ মিয়ার স্ত্রী নূরুন্নাহার বেগম অভিযোগ করে বলেন, খুনের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ পাড়ায়। অথচ হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে উত্তর পাড়ার বাড়ি-ঘরে। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল তখনই হামলা চালানো হয়। সব মিলিয়ে দেড়-দুইশ ঘর-বাড়ি হামলা-ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। এসব ঘরে কোনো জিনিসপত্র নেই। সব ঘর থেকেই নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুটে নেয়া হয়েছে।
হামলার সময় স্থানীয় ছত্তর মিয়ার বাড়ির উঠানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তার স্ত্রী আয়েশা বেগমের চোখে-মুখে এখনও সেসময়ের আতঙ্কের ছাপ। শূন্য ঘরের দুয়ারে বসে কাঁদছিলেন আয়েশা। তিনি জানান, তার ঘর থেকে অন্যান্য মালামালের সঙ্গে নগদ দুই লাখ টাকা ও কয়েক ভরি স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে লক্ষ্মীপুর গ্রামের আতশ আলী, মোল্লাবাড়ি, দফেআলীর বাড়ি, পনাগাজীর বাড়ির সঙ্গে খাঁ বাড়ি, ভূঁইয়া বাড়ি, হুরাগাজীর বাড়ি, কাতাইরা বাড়ি ও লাডুর বাড়ির লোকজনের বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধে এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন বসু খান, জিল্লু মিয়া, ফরিদ মিয়া, আবু জাহের, মোহন ও শাহজাহান এবং আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেন মুসলিম, খায়ের, শরীফ উল্লাহ্, ইউসুফ, জসিম, সবুজ, আবুল হোসেন ও বিল্লাল মোল্লা।
বছর দুয়েক আগে ফুটবল খেলা নিয়ে আতশ আলীর বাড়ি আর হুরাগাজীর বাড়ির মধ্যে ঝগড়ার ঘটনায় মামলা-মোকদ্দমা হয়। এটি মিমাংসার জন্য এলাকায় এসে দু’পক্ষকে নিয়ে গত ৩ মার্চ বৈঠকে বসার কথা ছিলো নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম সিকদারের। কিন্তু ওইদিনই একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা করে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহের ও জিল্লু মিয়ার ওপর মুসলিম, জামাল, মোহন মাস্টার ও জালালের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে জিল্লু মিয়া গুরুতর আহত হলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ঘটনার জের ধরে রাতে বাড়িতে যাওয়ার পথে মুসলিমের বাড়ির সামনে হামলা হয় দুলালের ওপর।
এক পক্ষের নেতা আরশ মিয়ার আত্মীয় শরীফ উদ্দিন জানান, ঘটনার রাতে আমি ও দুলাল গ্রামের বাইরে ছিলাম। রাত ৯টার পর গ্রামে মারামারি হয়েছে শুনে দুলালকে নিয়ে বাড়ি যাই। দুলালের বাড়ি আমাদের প্রতিপক্ষের মুসলিম বাড়ির উপর দিয়ে যেতে হয়। রাত ৩টার দিকে দুলাল বাড়িতে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
নবীনগর থানার ওসি আসলাম সিকদার জানান, খুনের অভিযোগে একটি এবং জিল্লু মিয়াকে মারধর ও বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। গভীর রাতে ঘটনাটি হওয়ায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করছে পুলিশ। এসব ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
সুত্র – জাগোনিউজ