মোঃ আক্তারুজ্জামান | সোমবার, ১৩ জুন ২০১৬ | পড়া হয়েছে 3909 বার
‘নদীর একুল ভাঙ্গে অকুল গড়ে এইতো নদীর খেলা, সকাল বেলা ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যে বেলা’ এ গানের পুরু ভাবার্থ নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে অনুভব করে মেঘনা পাঁড়ের বাসিন্দারা। তাদের অনেকেই চোখের সামনে দেখেছে সর্বগ্রাসী মেঘনা কিভাবে মানুষকে অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দেয়। ভবিষ্যত ভাবনা গুলোকে করে দেয় এলোমেলো। সব হারিয়ে আজ তার নিঃস্ব। খেয়ে না খেয়ে উপোসে মানবেতর দিন কাটায় তারা। এ বাচাটুকু করুন, তা উপলব্ধিতে স্পষ্ট হয়ে ঊঠে। অসহায়ত্ব কি! তারা টের পান আপনজনের মুখের দিকে তাকিয়ে। সর্বনাশী মেঘনার ছোবলে অনেকেই আজ নিঃশ্ব হয়ে ভাসমান জীবন তরী বয়ে চলছেন।
মেঘনা পাঁড়ে এখনো যে কয়টি বসতঘড় আছে তারা তাকিয়ে থাকেন সম্মুখপানে। এ চাওয়া কোন আপজন আসার অপেক্ষায় নয়, এ চাওয়া স্বপ্ন ভঙ্গের, অদৃশ্য শক্তির কাছে ভাঙ্গাগড়ার এ খেলায় ভিটেমাটি হারানোর হিসেবনিকেশ।
সর্বনাশী মেঘনা নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার ধরাভাঙ্গা, নূরজাহানপুর, সোনাবালুয়ার শতশত একর ফসলি জমি ও বসত ভিটে গিলে খাচ্ছে। এ চিন্তায় নদীপাড়ের বাসিন্দারা নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছেন। গত কয়েক দশক ধরেই চলছে ভাঙ্গন খেলা। এ খেলায় ওই গ্রামের বহু কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে৷ তাই মেঘনার এই অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী অঞ্চল গুলোতে প্রায় ৫ গ্রামের আনুমানিক পনের হাজার বাসিন্দা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন৷ ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের চিত্রি, নবীপুর ও চরলাপাং,বীরগাঁও ইউনিয়নের বাইশমৌজা, নজরদৌলত, কেদারখোলা ও দাসকান্দি, বড়িকান্দি ইউনিয়নে ধরাভাঙ্গা, মুক্তারামপুর, নূরজাহানপুর, সোনাবালুয়া ও এমপিটিলা এবং শ্রীঘর, কান্দাপাড়া উল্যেখযোগ্য।
এলাকাবাসী জানান, নদীর তীরবর্তী অংশগুলোতে সারা বছরই কমবেশী ভাঙ্গনের খেলা চলে ৷ তবে বর্ষাকালে এর আকার ভয়াবহতায় রুপ ধারন করে৷ চলতি মৌসুমে নদীর পাড়ের মানুষেরা অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ভয়ে সর্বদাই থাকেন আতংকে৷ মেঘনার অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ফলে এলাকার অনেক বিত্তশালী পরিবার এখন অন্যত্র অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান এলাকাবাসী৷
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ধরাভাঙ্গা, এমপি টিলা থেকে নূরজাহানপুর খাল পর্যন্ত ৩ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে নদী ভাঙ্গন চোখে পড়ার মত৷ স্থানীয়রা জানান, নবীনগর-নরসিংদী নৌ-পথের মানিকনগর বাজার ও বড়িকান্দিতে দুটি লঞ্চঘাট রয়েছে ৷ নবীনগর নরসিংদী নৌ-পথে চলাচলরত নৌ-যানের সুবিধার্থে স্বাধীনতার পূর্বেই লঞ্চঘাট দুটি এলাকায় স্থাপন করা হয়৷ সংশ্লীষ্ট সূত্র জানায়, নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে বড়িকান্দি এলাকায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ছয়শ মিটার একটি বাধ নির্মান করা হয়৷ ওই এলাকার মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, সোনাবালুয়া গ্রামের বহু ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে আরো আগেই বিলীন হয়ে গেছে৷ সেখানে কালের স্বাক্ষী হয়ে নদী পারাপারের একটি ঘাট চোখে পরে ৷ সোনাবালুয়ার নৌকাঘাটটি এখন নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে৷
বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, ধরাভাঙ্গা গ্রামের উত্তরপ্রান্তে মেঘনা নদীর পাড়ে ১৯৯৬ সালে একটি বাধ নির্মান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (এমপি টিলা হেসেবে পরিচিত) ৷ সেই বাধটির অনেকাংশ ইতিমধ্যে ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে পশ্চিম দিকের অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে৷ ওই সময়ে (২০ বৎসর আগে) মরহুম এডভোকেট আব্দুল লতিফ এমপির প্রচেষ্টায় ধরাভাঙ্গা এলাকায় একটি বাধ নির্মান করা হয় ৷ সেই বাধে এখন বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে যে কারনে উক্ত বাধটি পুনঃ সংস্কারের অভাবে বিলীন হওয়ার পথে৷
ধরাভাঙ্গা গ্রামবাসী জানান, বর্ষাকালে নদীর উত্তাল ঢেউয়ে আমাদের গ্রামের অনেক জমি বহু আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে৷ এ অঞ্চলটি নদী তীরবর্তী এবং উপজেলা সদরের শেষ সীমানায় হওয়ায় উন্নয়নকাঠামোগত ভাবে আমরা অবহেলিত।
বড়িকান্দি ইউনিয়নের যুবলীগের সিনিয়র সভাপতি মোঃ অবিদ মিয়া সরকার জানান, নবীনগরের সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল এর উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সাব এসিষ্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, সাংসদের পি.এস এবিএস জাবেদ গত বৎসরের ১২ সেপ্টেম্বর ধরাভাঙ্গার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যেগে দ্রুত ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে ধরাভাঙ্গা সোনাবালুয়া নূরজাহানপুর মুক্তারামপুর গ্রামের শত শত লোকজনকে আশ্বাস প্রদান করেন ৷ সে সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ডাঃ নোয়াব আলী, বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান, শাহ আলম মেম্বার , যুবলীগের সিনিয়ন সভাপতি মোঃ অবিদ মিয়া সরকার, যুবলীগের সেক্রেটারী নাসির উদ্দিন নাসির৷