মশিউর রুবেল | মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | পড়া হয়েছে 4437 বার
গ্রামের নাম নরসিংহপুর। এ গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে তিতাসের শাখা বুধন্তী খাল। খালের দক্ষিন পাড় নবীনগর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড ও উত্তর পাড় নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের অধীনে। ফলে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের দোটানায় পড়ে এ গ্রামের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হছে। এলাকাবাসীর র্দীঘদিনের দাবি, বুধন্তী খালে একটি পাকা ব্রিজ নির্মান করা দরকার ।
কিন্তু বহুবার আশ্বাস দেয়া হলেও কোন ফলোদয় হচ্ছে না। অসহায় গ্রামবাসী বাধ্য হয়ে ১০ বছর পূর্বে নিজেদের অর্থায়নে খালের ওপর ২৮০ ফুট র্দীঘ বাঁশের সেতু তৈরি করেন। প্রতি বছর সেতুর মেরামত কাজে গ্রামবাসীর কাছ থেকে ৫/৬ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে সেতুটির রক্ষনাবেক্ষন করা হচ্ছে।
নরসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী খলিলুর রহমান। এ গ্রামের একটি মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি তিনি। কথা প্রসঙ্গে হাজী খলিলুর রহমান জানালেন, ২০০৭ সালের দিকে তিনি উদ্যোগ নেন, বাশের সাকো নির্মানের। গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে তিনি এর বাস্তবায়ন করেন। এর আগে দুই পাড়ের মানুষজনের যাতায়াতে নৌ-পাড়াপার ছিল একমাত্র মাধ্যম। এলাকায় যা কিনা গোদারা হিসেবে পরিচিত।
লক্কর ঝক্কর মার্কা এই বাশের সাকো দিয়ে প্রতিদিন নরসিংহপুর,চিত্রি,জালালপুর,দাসকান্দি,মজিদপুর, র্দূগারামপুর,কান্দিপাড়া,শীতারামপুর উত্তর পাড়া, তিলকিয়া, হরিপুর, শোভারামপুর, কেদারখোলা গ্রামের ২/৩ হাজার গ্রামবাসী সহ স্কুল ও কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা যাতায়াত করে। দু’পাড়ের কমলমোতি শিশুদের জন্য একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় এসব শিশুরা সেতু পার হযেই স্কুলে যাতায়াত করতে দেখা যায়।
সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ লিটন মিয়া বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও বাঁশের সেতুটির ভাগ্য পরিবর্তন হয়না।
অন্যদিকে ওই এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য নদী পারাপার করতে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়া সাঁকো দিয়ে চলাচলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন শিশু, রোগী, বৃদ্ধা নারী-পুরুষ ও গর্ভবতী নারীরা।
স্কুলে যাতায়াতের সময় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের এক হাতে বই ও পায়ে জুতা নিয়ে পার হতে দেখা যায়। এতে অনেকেই স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন এলাকার কয়েকজন মুরব্বী।
নরসিংহপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা ইউপি সদস্য আলেয়া আক্তার। তিনি জানালেন, তিনি নিজেও এ পথে চলাচলে অসহনীয় ভোগান্তি পোহান। এছাড়াও দুই পাড়ের সাধারণ মানুষের হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। কবে নাগাদ এখানে পাকা ব্রীজ নির্মান হবে এর উওর নিজেই খুজে ফেরেন তিনি। তিনি আরো বলেন প্রতি বছর ছয় সাত লাখ টাকা খরচ করে সাকো নির্মান করা হলেও এর স্থায়ীত্ব বেশদিন টিকেনা। ফলে মেরামতে খরচ হয় অনেক টাকা।
ফতেহপুর আইডিয়াল প্রী ক্যাডেট স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনীর কয়েকজন শিক্ষার্থী সামিউল হাবিব, আসাদ ও নিহা জানায়, বাশের সাকোর উপ্রে উঠলেই ভয় লাগে। কখন জানি পরে যায়। মাঝে মধ্যে পা পিছলে পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানায় এসব শিশুরা।
এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিন মোহাম্মদ জানান, শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকগণ দুশ্চিন্তায় থাকেন। স্কুল শেষে নিরাপদে কখন বাড়ি ফিরবে।
এছাড়াও নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় শিকার হচ্ছে। এতে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। জরুরি ভিত্তিতে নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হলে এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে জানান গ্রামবাসী।
এ ব্যাপারে নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফিরোজ মিয়া জানান, সারাদেশে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। তারই অংশ হিসেবে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি প্রয়োজন। বুধন্তী খালের ওপর পাকা ব্রিজ র্নিমানের জন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।